Time Machine | Bangla Golpo | Bangla Story - tricksky

The Time machine tricksky

আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই আল্লাহ্‌র রহমতে ভালআছেন। নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন। আজকের পোস্ট এ আপনারা টাইম মেশিন গল্পটি। তো চলুন শুরু করা যাক- হ্যা, অবশ্যই গল্পটি ময়োযোগ দিয়ে পড়ুন!

টাইম মেশিন

নাম গোপন করে লাভ নেই । নামটা আমার বলেই ফেলি । আমার নাম হেনরী। আমি আমার এই গল্পটা বলেছিলাম আমার বন্ধু জেমস, জন আর রিডের কাছে। ওরা বিশ্বাস করেনি আমার কথা। হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। আমাকে বলেছিল ফাঁকিবাজ। আমি বলেছিলাম ওদেরকে, আমি একটা কালের কল বানিয়েছি। সে কল সময়ের বুকে আগু-পিছু করতে পারে— যেমন ইচ্ছা তেমন যেতে পারে। মানে কেবল গতকালের নয়, আগামী কালকেও সে দেখে আসতে পারে। ওরা সেদিন আমার কথা বিশ্বাস করেনি । বছর ষাট আগে বলেছিলাম কিনা। আজ আমার কথাটা তোমাদের কাছে ঝালহীন ঝোলের মত হয়ত পানসে মনে হবে। বলবে এটা আর এমন কি শক্ত! কিন্তু ওরা সেদিন বিশ্বাস করেনি। ওরা বলল, পানির ওপর দিয়ে নৌকা চলে জাহাজ চলে। এমনকি তল দিয়ে সাবমেরিন চলে, তা আমরা বুঝি। বাতাসের মধ্য দিয়ে উড়োজাহাজ চলে তাও আমরা দেখি। কিন্তু সময়ের মধ্য দিয়ে জাহাজ যেয়ে আগামী কালকেই আজ কেমন করে দেখে আসবে ? ওদের মাথায় একেবারে বুদ্ধি নেই। ওদের কেমন করে বোঝাই ? কিন্তু তোমরাই বল স্থান আর কাল— মানে সময় আর স্থান— এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য কি ? স্থানের কথা যখন আমরা বলি তখন তো তার মধ্যে আগু-পিছু করতে আমাদের কোন অসুবিধা হয় না।

আমরা পাঁচ মাইল আগেও যেতে পারি— আবার পাঁচ মাইল পেছনে ফিরেও দেখে আসতে পারি। তাহলে সময়ের বেলাই বা তা হবে না কেন ? আমরা বলি, তোমার কোন সময়ে মানে কোন্ বছর জন্ম ? জবাবে বলি, আমার জন্ম, ১৯০৮ সালের ১লা মে তারিখে। আমরা আফসোস করে বলি, হায় যদি ফিরে যেতে পারতাম ৬০ বছর আগের সেই দিনটিতে! আমি বলি, অসুবিধা কি ? আমার কালের কলে চেপে তার ব্যাক গিয়ারের লেভারটা অর্থাৎ পেছনে যাওয়ার লেভারটা চেপে দিলেই দিন-কাল-বছর পেরিয়ে ঠিক ৬০ বছর আগের সেই দিনটিতে যেয়ে নেমে পড়তে পারবে। আর পেছনেই যদি পারি সামনেই বা পারব না কেন। সামনের লেভারটা চেপে দিলে সাঁ করে দিন-কাল-বছর—এমন কি এই শতাব্দীর যে কটা বছর বাকি আছে তা পার হয়ে সামনের শতাব্দীতেও উঁকি মেরে আসতে পারি। মাত্র চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বছর সামনে যাওয়ার ব্যাপার নয়। আমি গিয়েছিলাম তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি বছর। সেই কথাটাই বলছি ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষার পরে মেশিন বসানো আমার শেষ হয়েছে— আমার ‘কালের কল’ বা ইংরেজীতে বলতে পারো ‘টাইম মেশিন’ ।  ল্যাবরেটরীর বাইরে সেদিন ছিল কালের কলের পরীক্ষার প্রথম দিন। সকাল না হতেই আমার মেশিনটার একটা পুরো ‘চেক আপ' আমি সেরে নিলাম। দেখলাম, ওর গীয়ারগুলো আর সময় মাপার মিটারগুলো ঠিক আছে কি-না। বেলা তখন দশটা বেজে পাঁচ মিনিট হয়েছে। সময়-সমুদ্রের নিঃসঙ্গ নাবিক আমি আমার যন্ত্রের ‘কপিটে’ আমি উঠে এলাম। আমি জানতাম না আমার ভাগ্যে কি আছে। পুরু কাচের চাইতে পুরু আর গতির তাপকে রোধ করতে পারে এমন স্বচ্ছ বস্তু দিয়ে আমার কপিটের ক্যাবিন তৈরী। তার মধ্য দিয়ে মায়াময় আজকের এই বিশেষ তারিখে শ্যামল পৃথিবীর দিকে আমি ক্ষণেকের জন্য তাকালাম। কিন্তু না, আর পেছনে তাকানো নয়। অসীম বিস্তারিত সময়-সমুদ্রের ভবিষ্যৎ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। 

আমি কালের কলের বৈদ্যুতিক স্টার্টারের চাবি ঘুরিয়ে দিলাম। বিকট শব্দে আমার যন্ত্রদানব থর থর করে কাঁপতে লাগল । কি এক অদম্য শক্তিতে সে যেন ফুঁসতে শুরু করেছে। যেন তার আর তর সইছে না। এবার শুধু বাকি ছুটে চলার লেভারটা চেপে ধরবার। তাহলেই সময়ের সমুদ্রের আমি বাধাহীন বলাকা । আমি তাই করলাম। আর বিলম্ব নয়। চেপে দিলাম সামনে চলার লেভার। প্রথমে খানিকটা আস্তে। ঘড়ির দিকে চাইলাম। দেখলাম সেই গতিতেই নিমেষ না যেতে ঘড়ির কাঁটা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। আমার বুক আনন্দে-উদ্বেগে কেঁপে উঠল। আমার জাহাজ তাহলে সামনের দিকে ছুটে চলেছে। ঐ নীচে ওরা যখন সাড়ে দশটার কাঁটায় শামুকের মত সেকেণ্ড আর মিনিট গুণে গুণে দিন যাপন করছে, আমি তখন সেকেণ্ড না যেতেই ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছি। তাই যদি সত্য হয়, তাহলে কেবল ঘণ্টা কেন ? গতির লেভারে চাপ দাও আরো জোরে। সাধারণ মানুষের সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দীর্ঘ ব্যবধানের ইতিহাসে আর আমি আটকে থাকতে চাইনে। তাই চাপ দিলাম আমার টাইম মেশিনের গতির লেভারে আরো আরো জোরে। বন বন করে রেখার আভাসকে অতিক্রম করে এবার সময়ের কাঁটা মুহূর্তে বছর পাড়ি দিয়ে চলল । কালের কলের গতি ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। এবার আমি আমার বছর হিসাবের মিটারের দিকে চাইলাম। সময়-সমুদ্রের কোথায় এসেছি এবার তার একটা হিসাব নেওয়া যাক।

হিসাব নিতে গিয়ে আমায় চোখের মণি তো বিস্ময়ের আঘাতে প্রায় বেরিয়ে আসার উপক্রম। ‘ইয়ার মিটারের রিডিং’ হিসাব করে দেখলাম—একটি নয়, দুটি নয়, একশ নয়, দুশো নয়, হাজার নয়, দু'হাজার নয়, লক্ষ নয়, দু'লক্ষ নয়, আমি পাড়ি দিয়ে এসেছি আট লক্ষ বছর পথ। এবার তাহলে আমায় থামতে হয়। এই আট লক্ষ বছর ভবিষ্যতের যে পৃথিবী তার মানুষগুলো কেমন তাতো আমাকে দেখতে হবে। আর এই আট লক্ষ বছরে মানুষ কি হয়েছে তার হদিস নিয়ে আট লক্ষ বছর আগের অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর আমার কালটিতে আমাকে ফিরে যেতে হবে। তাই এবার আমার কালের কলের গতি একেবারে থামিয়ে দিলাম। আমার জাহাজ এবার আস্তে আস্তে মাটিতে নেমো এল । আমার কালের কল যেখানে এসে নামল সেখানে প্রথমে কোন মানুষের সাড়াশব্দ পেলাম না। আমার ভয় হল, তাহলে কি এই আট লক্ষ বছরে মানুষজাতি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ? কিন্তু না, আমার ভয়কে দূর করে কতকগুলো মানুষের কলরব আমার দিকে কিছুক্ষণের মধ্যেই এগিয়ে আসতে লাগল ।

 ওরা আরো কাছে এগিয়ে এল। আটলক্ষ বছর ভবিষ্যতের মানুষ! ওরা আমায় ঘিরে দাঁড়াল । ছোটখাটো পুতুলের মত মানুষগুলো। মিষ্টি মিষ্টি চেহারা। পরনে সব ফুলের পোশাক । গলার আওয়াজ কত মধুর! এই পুতুলদের কাছ থেকে আর যাহোক ভয় পাওয়ার `কিছু নেই, এটা বুঝতে আমার কষ্ট হল না। মানুষগুলো এত সরল, এত শিশুর মতো, ওদের দেহে যে কোনো শক্তি আছে সেটি বোঝারই উপায় নেই। আমি ভাবলাম তাহলে আট লক্ষ বছরে এখনকার মানুষ এই হয়ে দাঁড়িয়েছে! ফুলের মত কোমল আর দুর্বল। ওরা মজার দৃষ্টিতে আমার টাইম মেশিনটা দেখতে লাগল। কেউ কেউ তার যন্ত্রপাতি নিয়ে নাড়াচাঢ়া করতেও শুরু করল। ওদের ভাষা আমি কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু ওরা আদর করে আমার যেন কোথায় হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইল । ওদের সাথে যাওয়ার আগে আমি কালের কলের গতির চাবিটা সাথে নিয়ে নিলাম। তা না হলে বলা তো যায় না, ওরা কেউ যদি আমার টাইম মেশিনটাকে চালু করে দেয় তাহলে আমার আর ফিরে যেতে হবে না। এই আট লক্ষ বছরের আগাম দুনিয়াতেই আমাকে আটকে থাকতে হবে। 

সেটি আমার মোটেই পছন্দ হল না। টাইম মেশিনে এসে অবশ্য ভবিষ্যৎকে দেখে গেলাম একবার। এ বাহাদুরীর গল্প তো আমায় করতে হবে। তাছাড়া মেশিনে চড়ে এক নিশেষে লক্ষ বছর এগুবার চাইতে বন্ধুজনদের সাথে দুঃখ-কষ্টের মধ্যে যুগ যুগ ধরে একটু একটু করে এগুনোই ভাল। যাহোক আগামী যুগের মানুষের সাথে হাঁটতে হাঁটতে ওদের থাকবার বাড়ীগুলো

দেখতে লাগলাম। সেগুলোর একটা মজা এই যে, ছোট বাড়ী বলতে এখানে একটাও দেখতে পেলাম না। এদের সবাই দেখি কলোনী ধরনের বহুতলার বাড়ীতে দলবদ্ধভাবে বাস করে। এবার ওরা আমায় ওদের একটা দালানের খাবার ঘরে নিয়ে এল। আকারে-ইঙ্গিতে আমাদের কথা হল। খাবার টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে। আমার তখন খিদেও পেয়েছে বেজায়। এ সময়ে আর কোন ভাষার প্রয়োজন হয় না।

 ওদের খাবারেও একটা মজা দেখলাম। টেবিলে গোশত বলতে কিছু নেই। কেবল শাকসব্জি। বুঝলাম মানুষ এত লক্ষ বছরে তার নীচের স্তরের গরু-ছাগল-ভেড়া সব খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। ওগুলো জাতি হিসাবেই শেষ হয়ে গেছে। বেশ কিছুদিন আমি ওদের সঙ্গে কাটাতে লাগলাম । ওদের মুখের দু’একটা শব্দও আমি শিখে ফেললাম। তার অর্থ বোঝার চেষ্টা করলাম। ওদের মধ্যে একটি মেয়ে ছিল, তার দিকে আঙুল তুলে প্রশ্নের ভাব নিয়ে চাইতে সে বলল ঃ ইলয় । আমি বুঝলাম ওরা ওদেরকে "ইলয়" বলে । একদিন বিকেলে নতুন যুগের মানুষের দেশে আমি বেড়াতে বেরুলাম। দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় বিগত যুগের সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। আমি বুঝতে পারছি মানুষের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল নয় । আট লক্ষ বছরে সে যদি শক্তিতে এবং আকারে এই হয়ে থাকে তাহলে আর আট লক্ষে সে নিশ্চয়ই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু, থাক সে গবেষণার কথা। একটু দূরে দেখলাম অন্ধকার গভীর একটা কুয়ার মত কি যেন রয়েছে। কুয়ার ভেতরটা দেখা যাবে পরে। এখন যে আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি যেখানে নেমেছিলাম সেখানে গিয়ে আমার টাইম মেশিনটাতেই তো আমি ঘুমাতে পারি।

 সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আর কি আশ্চর্যের ব্যাপার, অন্ধকার নামতেই ভোজবাজির মতো ইলয়ের দল যেন কোথায় মিলিয়ে গেল! এই অন্ধকার মাঠে আমি একা কি করব। ভয় পেয়ে আমার ‘কালের কলের’ দিকে দৌড়াতে লাগলাম । কিন্তু হায় আল্লাহ্! কোথায় আমার টাইম মেশিন। যেখানে রেখে গিয়েছিলাম তার কাছে কোথায়ও যে তাকে দেখতে পাচ্ছিনে। কারা সরাল আমার মেশিন ? কেমন করে সরাল ? তবে কি আট লক্ষ বছর আগাম দুনিয়াতে আমাকে শেষ পর্যন্ত আটকে থাকতে হবে! ভাবতেই ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এল। পাগলের মত আমি ঝোপ-ঝাড় খুঁজে দেখতে লাগলাম— কোথায় আমার টাইম মেশিন! কিন্তু কোথাও পেলাম না। শেষে ক্লান্তির ভারে এক সময়ে কোথায় যে ঘুমিয়ে পড়লাম সে খেয়ালও আমার রইল না। সকালের আলো চোখে লাগতে নতুন রাজ্যে আমার ঘুম ভাঙলো।

 দিনের আলোতে দেখলাম ইলয়ের দল আবার এসে হাজির হয়েছে। কিন্তু মনের প্রশ্ন ঃ আমার কালের কল কোথায় ? ঐ মেশিনকে যে নতুন মানুষ ইলয়ের দল কোথাও টেনে নিয়ে যাবে এ আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। সে বুদ্ধিই যে ওদের নেই। কিন্তু দেখলাম আমার কালের কল টেনে নেওয়ার একটা দাগ পড়ে আছে। আর সে দাগের পাশে ইয়া বড় বড় অদ্ভুত সব পায়ের ছাপ । আমার মনে প্রশ্ন জাগল । এ পায়ের দাগ কাদের ? এ তো ইলয়ের মত পুতুল-মানুষের পায়ের দাগ হতে পারে না। তাহলে ? তাহলে ? আরো কি মানুষ আছে ? কোন দানব সৃষ্টি হয়েছে এই আট লক্ষ বছরে ? এ রহস্য আমাকে জানতেই হবে। আমি তাই অদ্ভুত সেই পায়ের দাগ ধরে এগুতে লাগলাম। যেতে যেতে সত্যিই আমার মেশিনের হদিস পেলাম। দেখলাম উড়োজাহাজের হ্যাঙ্গারের ন্যায় একটা গুহায় আমার মেশিনটাকে পুরে রাখা হয়েছে। আর তার উপর পাহারা দিচ্ছে বিরাট দুই পাখাবিশিষ্ট এক সিংহমূর্তি।

 হ্যাঙ্গারের দরজায় আমি ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করতে লাগলাম : 'আমার কালের কল তোমরা ফিরিয়ে দাও।' দেখলাম আমার পেছনে পেছনে ইলয়ের দল এসেও হাজির হয়েছে। ওদের আরো কাছে এগিয়ে আসতে বললাম। কিন্তু কি জানি কি ভেবে ওরা আর হ্যাাঙ্গারের ঐ সিংহমূর্তির কাছে এগিয়ে আসতে সাহস পেল না। ঐ যাক। আপাতত আমার কালের কলের উদ্ধার তো সম্ভব নয়। আমি বুঝলাম আমাকে ধৈর্য ধরতে হবে । আমাকে এ দেশের কথা আরো জানতে হবে। এবার আমি ইলয়দের নিয়ে ঘুরে ঘুরে ওদের দেশ দেখতে লাগলাম । কি আশ্চর্য! এত যে দিনের পর দিন হাঁটছি, ধান-পান-ভুট্টা-গম কিছুই যে দেখতে পাচ্ছিনে। কেবল দেখছি ফুল আর ফুল। এ যেন রাজ্যব্যাপী ফুলের বাগান । কিন্তু তবুও ইলয়দের পরনের কাপড় দেখলাম ঢাকাই মসলিনের ন্যায় সূক্ষ্ম সুতায় নরম করে বোনা। আর খাবারের সময়ে টেবিল ভর্তি দেখলাম নানা রঙের ফল।

 কিন্তু প্রশ্ন হল ঃ কে বোনে এই কাপড় ইলয়দের জন্য, আর কে চাষ করে এই শাকসব্জি ফল-মূলের ? তারপর আমি একদিন গেলাম সেই অন্ধকারময় গভীর কুয়ার পাড়ে। নীচের দিকে চাইতে কেবল অন্ধকার বাদে আর কিছু আমার চোখে ঠেকল না। ইলয়দের কাছে আসতে ডাকলাম। কিন্তু পুতুলের দল কাছে আর আসে না । কি আছে এই গুহার মধ্যে তা বোঝার জন্য এবার আমি কুয়ার গায়ে কান পেতে রইলাম। এবার সব অদ্ভুত ভারী আওয়াজ উঠে আসতে লাগল ঐ কুয়ার ভেতর থেকে ! কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না, কি ব্যাপার! তবে কি এই গভীর গুহার নীচে কোন কারখানায় কাজ হচ্ছে ? ওর নীচেও কি মানুষ বা কোন প্রাণী আছে ? সেই রাত্রের কথা বলছি । সে রাত্রের ঘুমের মধ্যে আমি যেন একটা দুঃস্বপ্ন দেখলাম : মনে হলো কিম্ভূত আকারের কতকগুলো দৈত্যদানব যেন আমাকে ঘিরে ধরেছে।

 ঘুমের মধ্যে আমি তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে উঠলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতের ঘটনার কথা ভাবলাম। সেটা কি কেবলই দুঃস্বপ্ন ? না ইলয় ছাড়া আর কোন জাতের দৈত্যদানব আট লক্ষ বছরের এই ভবিষ্যৎ রাজ্যে রয়েছে ? এদিনই হাঁটতে হাঁটতে পুরাতন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আমি একটা গুপ্ত টানেলের মত পথ দেখতে পেলাম। সে টানেলের কাছে এগুতেই দৈত্যের মত একটা মানুষ আমার পাশ দিয়ে ছুটে চলে গেল। আমিও ওর পিছু ধাওয়া করলাম। যেতে যেতে আমরা সেই কুয়াটার কাছে প্রায় পৌঁছে গেছি। লোকটা আমার সামনে, আমি পেছনে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে দেখলাম অদ্ভুত সেই লোকটা অন্ধকার সেই গভীর কুয়ার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল ।

 কুয়ার কাছে আরো এগিয়ে নীচের দিকে চাইতে দেখলাম, গভীর সেই কুয়ার গায়ে লাগানো রয়েছে একটা লোহার সিঁড়ি। আর সেই সিঁড়ি বেয়ে মাকড়সার মত তরতর করে নেমে যাচ্ছে অন্ধকারের মধ্যে সেই লোকটা। এতক্ষণে ইলয়রাও আমার কাছে এগিয়ে এসেছিল। ওরা এতক্ষণ এই দানবের ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ছিল। দানবটা গহ্বরর মধ্যে নেমে যেতেই ইলয়রা আবার নিশ্চিন্তে দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু কলল। ওদের ভাষা তো আমি এখনও ভাল করে জানিনে। তাই আকারে-ইঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে এবং সমস্ত অবস্থা চিন্তা করে আমি বুঝলাম, এই দানবগুলো কারা। আসলে, এই আট লক্ষ বছরে মানুষ জাতি দুটো উপজাতিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল হচ্ছে ইলয়। ওরা থাকে আলোতে। চেহারা চরিত্রে ফুলের মত নরম আর অসহায় ।

 ওদের কোন শক্তি নেই। শরীরও ওদের পুতুলের মতো ছোট হয়ে গেছে। আর একদল হচ্ছে এই দানবকুল । ওরা শক্তিমান । ওরা থাকে মাটির নীচে, অন্ধকার রাজ্যে। আর একটা কথাও আমি বুঝলাম। ইলয়রা নিজেরা চাষবাস করে না। কিন্তু খায়দায় ভাল । ওরা কোথায় পায় সে খাবার ? কারণ যাই হোক, মাটির গভীরে দানবরা কাজ করে, খাটে, ফল-ফসল তৈরী করে। আর তাকে কোন বিশেষ শক্তির জোরে এই দুর্বল ইলয়রা ভোগ করে ।

 কিন্তু সেকথা তোমাদের পরে বলছি। এদিকে হয়েছি কি একদিন তো ইলয়দের এই রাজ্যে মাঠের মধ্য দিয়ে হাঁটছি। এমন সময় শুনলাম কে যেন ভয়ানক চিৎকার করছে। কোন বিপদ ভেবে ঐ চিৎকার লক্ষ্য করে আমি দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সত্যি একটা পদ্মপুকুরে কটি মেয়ে ফুল তুলতে নেমে ডুবে যাচ্ছে। আমি অমনি লাফ দিয়ে পড়ে তাকে টেনে তুললাম। মেয়েটি তো জীবন পেয়ে আমার উপর ভারি খুশী হলো । আনন্দে ওর চোখ ছলছল করে উঠল এরপর মেয়েটি রোজই আমার কাছে আসত।

 ওর জীবন বাঁচিয়েছি, এজন্য নানা রকম ফুল দিয়ে,ও আমাকে খুশী করার চেষ্টা করত। কিন্তু আমার আসল উদ্দেশ্য তো এই আজব রাজ্যের রহস্য জানা আর আমার কালের কলটা উদ্ধার করে তাতে চড়ে আট লক্ষ বছর পাড়ি দিয়ে আমার নিজের দেশে আবার ফিরে আসা। তাই মেয়েটির কাছ থেকে আমি একটি দু'টি করে ওদের ভাষার শব্দ শিখতে লাগলাম । ওর দিকে আঙুল দেখিয়ে প্রশ্ন করলাম ঃ তোমরা কারা ? মেয়েটি শব্দ উচ্চারণ করল ঃ ইলয়, ইলয়! আর ভাবে বোঝাল ইলয়রা খুব ভাল ।  আমি কুয়ার নীচে আঙুল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ঃ ওখানে কারা থাকে ?  শব্দ উচ্চারণ করল : মোরলোক, মোরলোক! আমি বুঝলাম মাটির নীচে যারা থাকে তাদের ইলয়রা ‘মোরলোক' বলে। আমার পরিচিত এই মেয়েটির নাম ছিল ভীনা। ভীনার কথা থেকে আমি বুঝলাম মোরলোকদের ওরা খারাপ মনে করে এবং ওরা তাদের ভয়ানকভাবে ভয় করে।

 আমি জিজ্ঞেস করলামঃ কেন তোমরা মোরলোকদের ভয় করো ? ভীনা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠল। ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল : মোরলোকরা রাতের জীব। ওরা আলো ভয় পায়। কিন্তু অন্ধকারে ওরা দানবের মতো শক্তিশালী। ওরা রাত হলেই বার হয়ে আসে। ইলয়দের উপর আক্রমণ করে। ওরা ইলয়দের ধরে ধরে খেয়ে ফেলে । আমি ভাবলাম, কি সাংঘাতিক কথা ! ভীনাকে বললাম ঃ তুমি মোরলোকদের কথা আর কিছু জান ? ও বলল ঃ না, আমি আর কিছু জানিনে। আমি বললাম ঃ তাহলে আমি নিজেই মাটির নীচে ঐ মোরলোকদের রাজ্যে যাবো। ভীনা ভয় পেয়ে বললঃ না, না তুমি যেয়ো না। ওরা সাংঘাতিক!

 আমি বললাম ঃ আমার গায়েও শক্তি আছে। আমি আলো-অন্ধকার কোনটাকেই ভয় করিনে। এই বলে আমি মোরলোকদের রাজ্যে যাবার সেই কুয়ার সিঁড়ি ধরে ধরে নেমে যেতে লাগলাম । সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে অমি নামছি তো নামছিই। এর যেন আর শেষ নেই। অনেক পরে যখন পায়ের তলায় মাটি পেলাম, তখন দেখলাম আমার বাঁ-পাশে রয়েছে পুবে-পশ্চিমে একটা টানেল। এবার আমি এই টানেল ধরে এগুতে লাগলাম। টানেল ধরে আমি যতো এগুচ্ছি ততই যেন বিরাট বিরাট কি সব যন্ত্রের আওয়াজ বেশী করে গম গম শব্দে টানেলটাকে কাঁপিয়ে তুলছে। আরো একটু এগুতে এবার পেলাম একটা খোলা জায়গা ।

 অন্ধকারে আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। মোরলোকরা নাকি অন্ধকারেই দিনের মত দেখে- আর দিনের আলোতে একেবারে রাতের মত অন্ধ হয়ে যায়। আমার চারপাশে কি হচ্ছে দেখার জন্য আমি পকেট থেকে দেয়াশলাই বার করে একটা কাঠি জ্বালালাম। কাঠি জ্বালাতেই আলোর আঘাতে মোরলোকদের দল সুরসুর করে কোথায় সরে পড়ল । কিন্তু আমার হাতের কাঠি যেই নিভে গেল অমনি আবার ওরা দৌড়ে এসে আমায় ঘিরে ধরল । আমি বুঝলাম— আমার শক্তি আলো, ওদের শক্তি অন্ধকার। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, আমার পকেটে তখন আর মাত্র চারটা দেয়াশলাইয়ের কাঠি ছিল। তারই একটা আবার জ্বালিয়ে আমার বেরিয়ে আসার টানেলের মুখে এসে দাঁড়ালাম। কিন্তু বাতাসের ঝাপটায় এটাও গেল নিভে ।

 অমনি ওরা বাঘের মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করল । ওরা আমায় প্রায় ধরে ফেলছে। আমার আর মাত্র দুটো কাঠি তখন আছে। তারই একটা আমি জ্বালালাম। এখান থেকে বেরুতে আমাকে হবেই। এমনি করে কোনরকমে উপরে ওঠার সেই কুয়ার সিঁড়িটার গোড়ায় এসে পৌঁছলাম। ওদিকে ওরা নীচ থেকে আমার পা ধরে টেনে নামিয়ে নেয়ার বেদম চেষ্টা করতে লাগল। আমিও প্রাণপণ শক্তিতে পা ঝাপ্টা দিয়ে ওদের ঝেড়ে ফেলে উপরে উঠতে লাগলাম। এমনি করে কোনরকমে ওদের কবল থেকে উদ্ধার পেয়ে আমি উপরে উঠে এলাম । উপরে উঠে দেখি ভীনা মেয়েটি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি এতক্ষণে এত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম যে, আর দাঁড়াতেও পারলাম না। মাটিতে শুয়ে পড়লাম। ভীনা ওদের ভাঙা ভাঙা শব্দে আমাকে অভয় দিতে লাগল : মানুষ তুমি ভয় পেয়ো না। এখন আর কোন বিপদ নেই ।

 মোরলোকেরা আলোকে ভয় করে। ওরা এখন আর আসতে পারবে না। আমি একটু সুস্থ হয়ে ভীনার কাছ থেকে এই নতুন রাজ্যের কথা আবার জানতে চেষ্টা করলাম । আমি বললাম ঃ আচ্ছা ভীনা, মোরলোকরাই কি ইলয়দের সব কাজকর্ম করে দেয়? ভীনা বলল ঃ হ্যাঁ, মোরলোকরাই আমাদের কাজ করে। আমি বললাম ঃ এ.তো আশ্চর্যের কথা ! তোমরা ইলয়রা তমোরলোকদের ভয় পাও মোরলোকেরা তোমাদের খেয়ে ফেলে । ভীনা বলল : হ্যাঁ, একথা সত্য । আমি বললাম ঃ কিন্তু এমনটা কি করে হল ? তোমরা ইলয়রা কত সুন্দর, কত ভাল কিন্তু অসহায়। আর মোরলোকরা কত নৃশংস কিন্তু দেখ কত কর্মঠ, কত কৌশলী।

 মানুষ এই আট লক্ষ বছরে এমন করে দু’টি ভাগে কি করে বিভক্ত হয়ে গেল ? কিন্তু ছোট্ট ভীনা আমার এ প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারলো না। আর একদিনের কথা বলছি। ভীনাকে বললাম, ভীনা চলো আমরা বেড়িয়ে আসি।


ভীনা বলল ঃ কিন্তু রাত হয়ে গেলে মোরলোকেরা যদি এসে পড়ে। আমি বললাম ঃ সেকথা ঠিক । দেয়াশলাই থাকলে তো আর ভয় ছিল না। কিন্তু আমার চারটে দেয়াশলাইয়ের কাঠি ওদের সাথে নীচে লড়াই করতেই শেষ হয়ে গেছে। তাহলেও ভয় কি ? আর একটা কিছু হাতের কাছে পেলেই আমি ওদের শায়েস্তা করতে পারব।

এদিন আমরা দু'জনে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে একটা সবুজ মাঠের মধ্যে এসে পড়লাম। সে মাঠের মধ্যে দেখলাম এক বিরাট প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে যেতেই আমি বুঝলাম এ এক অদ্ভুত এবং আশ্চর্য রকমের যাদুঘর। এর দর্শনীর মধ্যে কোথাও রয়েছে অতীত দিনের আকারের জন্তুর কঙ্কাল। কোথাও রয়েছে আট লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে যে ধরনের রেলগাড়ী এবং ইঞ্জিন ব্যবহার করা হত তার মডেল। কোন কোন বাক্সগুলো এত মজবুত ও সঠিকভাবে বায়ুশূন্য করে রাখা হয়েছে যে হাজার হাজার বছরের পুরাতন জিনিসপত্র একটুও নষ্ট হয়নি। আমার কেবল আফসোস হতে লাগল এই ভেবে যে, হায়রে, আট লক্ষ বছর পাড়ি দিয়ে এলাম— কিন্তু এই আট লক্ষ বছরে মানুষ কেমন করে পরিবর্তিত হয়ে এই অবস্থায় এল, সেই ইতিহাসই আমি জানতে পারলাম না । এতক্ষণ খেয়াল ছিল না যে, রাত হয়ে গেছে।

 হঠাৎ দেখি বিরাট বিরাট পা ফেলে মোরলোকদের দল এগিয়ে আসছে। এখন কি করি! নিজেকে বাঁচাতে হবে। ভীনাকে বাঁচাতে হবে। বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে দৌড়ে ঢুকলাম একটা পাশের ঘরে। সেখানে দেখলাম ভাঙ্গাচোরা কলকব্জার টুকরা পড়ে আছে। তারই একটা ডাণ্ডা তুলে নিলাম হাতে।

ভীনাকে ধরে এর পরে এগিয়ে গেলাম আর একটা ঘরে। ডাণ্ডা দিয়ে কি আর দানব রোখা যায় ? পাশের ঘরে দেখলাম বড় বড় রাইফেল আর কার্তুজ সাজানো আছে। ডাণ্ডার চেয়ে তাই ভাল মনে করে একটা রাইফেলে কার্তুজ ভরে মোরলোকদের উপর ছুঁড়লাম। কিন্তু, হায় কপাল! তাতে কোন আওয়াজই হল না! এবার বুঝলাম— এগুলো সত্যিকারের রাইফেল নয়— নকল রাইফেল বা ডামি ।

এখন উপায় ? আমরা দু'জনে এখন হাঁপাতে হাঁপাতে যাদুঘরের এ ঘর থেকে ও ঘরের দৌড়াতে লাগলাম। কেমিস্ট্রিরও একটা ঘর ছিল ঐ মিউজিয়ামে। আমরা এবার ওখানে গেলাম। ওখানে নিশ্চয়ই আগুন জ্বালাবার কোন জিনিস পাওয়া যাবে। সত্যি তাই। ওখানেই পেয়ে গেলাম আমরা মোরলোকদের ভয়ের মোক্ষম অস্ত্র, দেয়াশলাইয়ের কাঠি । এবার আর কি! এবার ঠুক করে একটি কাঠি জ্বালালেই মোরলোকদের দল আলোর আঘাতে দুঃস্বপ্নের মতোই মিলিয়ে যাবে। শুধু দেয়াশলাই-এর কাঠি নয়, ক্যাম্ফোর গ্যাসের একটা গ্যাসবাতিও আমরা সঙ্গে করে নিলাম। যাদুঘর থেকে যখন বেরুলাম আমরা, তখন ঘোর অন্ধকার । চারদিকেই মোরলোকদের বাহিনী।

 ও রা আমাদের পেছনে ধাওয়া করে আসতে লাগল। আমরা ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছি বনের মধ্য দিয়ে। দু'একটা দেয়াশলাই-এর কাঠি জ্বালিয়েছিলাম। কিন্তু তার আয়ু আর কতটুকু! একখানে জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দেবারও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মোরলোকদের বাহিনী এত শক্তিশালী যে আমরা কিছুতেই ওদের দূরে হটিয়ে দিতে পারছিলাম না। অবশেষে আর উপায় না দেখে ক্যাম্ফোর গ্যাসের বাতিটা ধরিয়ে দিলাম। তার উজ্জ্বল আলোয় রাতের বন দিনের মত ফর্সা হয়ে উঠল। আর চারপাশের মোরলোক বাহিনী দু'হাত দিয়ে চোখ ঢেকে পিছু হটে পালিয়ে গেল ।

যাক্, এ যাত্রা তো রক্ষা। কিন্তু এতক্ষণে দেখলাম ভীনা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। ভীনাকে আমি কাঁধে তুলে নিলাম। কিন্তু একটু এগুতেই বুঝলাম এই রাতে বনের মধ্যে পূর্ব-পশ্চিম উত্তর-দক্ষিণ সব সমান হয়ে গেছে। কোন্ পথে যে ইলয়দের বাসস্থানে ফিরে যেতে পারব, তাই আমি ভুলে গেছি।

রাত না কাটিয়ে আর এগুনো যাবে না ভেবে কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ভীনাকে নিয়ে আমি বসে রইলাম। ক্লান্তিতে একটু পরে হয়ত আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর কাঠের আগুনও হয়ত নিভে গিয়েছিল। আগুন নিভতেই মোরলোকদের শত শত হাত আমাকে এসে জাপটে ধরলো। আমি লাফ দিয়ে উঠে একটা ঢাণ্ডা বেদম জোরে চারদিকে ঘুরাতে লাগলাম। সে ধাক্কার চোটে কিছু কিছু মোরলোক ছিটকে পড়তে লাগল । কিন্তু আবার শক্তি নিয়ে ওরা এগিয়ে আসতে লাগল। কতক্ষণ যে ওদের ঠেকিয়ে রাখতে পারব তা আর বুঝতে পারলাম না। এবার হয়ত আমার এবং ভীনার— দু'জনার জীবনই মোরলোকদের হাতে শেষ হয়ে যাবে। ওরা আমাদের খেয়ে ফেলবে ।

 এভাবে লড়াই কতক্ষণ চলেছিল, আমার খেয়াল নেই। কিন্তু হঠাৎ দেখলাম মোরলোকদের দল পড়িমরি করে ছুটে পালাচ্ছে। কি বিরাট এক শক্তি যেন ওদের তাড়া করছে। কিছু পরেই এক কারণ বুঝতে পারলাম। সমস্ত বন কি এক বিরাট শক্তির আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছে। আসলে বনের মধ্যে বসে একটা জায়গায় আমি যে আগুন জ্বালিয়েছিলাম সে আগুন নেভেনি। তার কোন ফুল্কি থেকে সমস্ত বনে আগুন ধরেছে। বন দাউদাউ করে জ্বলে উঠছে। আর তীব্র আলোর আঘাতে অন্ধকারের জীব মোরলোকরা প্রাণভয়ে পালাচ্ছে। ভীনাকে কাঁধে করে আমিও নিরাপদ জায়গায় পৌছার চেষ্টা করলাম। শেষ পর্যন্ত একটা পাহাড়ের চূড়ায় এসে আমরা পৌঁছলাম। এখানটা নিরাপদ। এখান থেকেই আমি দেখলাম চারিদিক দাউদাউ করে জ্বলছে আর মোরলোকরা পালাচ্ছে।

দিনের জন্য আমরা অপেক্ষা করলাম। বনের আগুনও ক্রমান্বয়ে নিভে এল। আমরা এবার ইলয়দের গ্রামে ফিরে এলাম। রাতের সমস্ত ঘটনাটাই যেন বিরাট একটা দুঃস্বপ্ন। দুঃস্বপ্নই বা বলি কি করে—সবই তো সত্যি। সে যাই হোক বিশ্রাম নেওয়ার পরে ঠিক করলাম— এবার আমার নিজের যুগে ফিরে যেতে হবে। আট লক্ষ বছরের আগামী যুগে থেকে আমার লাভ নেই। এখানে মানুষ দুই উপজাতিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল একেবারে নিষ্কর্মা শক্তিহীন, অসহায়। আর একদল নৃশংস! এবার আমি আমার টাইম মেশিনের খোঁজে বেরুলাম। মোরলোকরাই কালের কলটা টেনে নিয়ে একটা হ্যাঙ্গারের মধ্যে আটকে রেখেছিল।

 খুঁজতে খুঁজতে সেই হ্যাঙ্গারের কাছে এসে আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, হ্যাঙ্গারের দুয়ার খোলা—ভিতরে আমার কালের কল দাঁড়িয়ে আছে। এমন সৌভাগ্যের কথা আমি ভাবিনি। আমি ভেবেছিলাম এখানেও আমাকে মোরলোকদের সাথে লড়াই করতে হবে। দুয়ারের ভিতর দিয়ে আমি হ্যাঙ্গারের মধ্যে ঢুকে আমার টাইম মেশিনের কপিটে গিয়ে বললাম। পকেট থেকে ‘কন্ট্রোল লেভার’ দুটো বার করে ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিলাম। কপিটে বসে আমি যখন আমার কালের কল পরীক্ষা করে দেখছিলাম, তখন হঠাৎ দেখি হ্যাঙ্গারের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আর অমনি আবার মোরলোকদের দল আমার জাহাজের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। কিন্তু আমি এজন্য তৈরি ছিলাম।

 মুহূর্তের মধ্যে কপিট বন্ধ করে স্টার্টারের সুইচ টিপে দিয়ে উপরে ওঠার লেভারে আমি চাপ দিয়ে দিলাম। অমনি আমার জাহাজ মোরলোকদের হ্যাঙ্গার ভেদ করে নিমেষের মধ্যে সময়ের মহাসমুদ্রে এসে ভাসতে লাগল । পুরো বেগ দিয়ে আবার আমি ‘এয়ার মিটারের' দিকে চেয়ে রইলাম। মিটারের কাঁটা নিমেষ না যেতে পেছনের দিকে বছরের পর বছর, শতের পর শত, হাজারের পর হাজার যুগ পার হয়ে যেতে লাগল এবং ঘণ্টাখানেক না যেতেই আমার প্রিয় 'টাইম মেশিন' এসে আমার ল্যাবরেটারীর কোলটিতে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। আমি লক্ষ লক্ষ বছরের ভবিষ্যৎ থেকে ফিরে এসে আমার আজকের যুগের পরিচিত পরিবেশে নেমে এলাম।



আশা করি এই পোস্ট টি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কিন্তু কমেন্ট করে জানাবেন। আর এরকম সব পোস্ট পেতে প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকুন আমাদের এই ওয়েব সাইট টি। আবার দেখা হবে পরবর্তী কোনো পোস্ট এ। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।



Md: Minhajul Islam YT

Next Post
No Comment
Add Comment
comment url