যৌথ ব্যবসার মূলনীতি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা

যৌথ ব্যবসার মূলনীতি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা

হালাল উপার্জন Tricksky

আমাদের সমাজে পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে এবং যে বীভৎস রূপ ধারণ করেছে, তা আদালতে দায়েরকৃত মামলা-মোকদ্দমার পরিসংখ্যান দ্বারা কিছুটা অনুমান করা যায়। তবে; বাস্তবিকপক্ষে ঝগড়া বিবাদের সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি। আদালতের ব্যয় নির্বাহ অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে, অনেক বিবাদ আদালত পর্যন্ত পৌঁছে না। কিন্তু বিবাদের আগুন ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে। একে অপরকে কষ্ট দেওয়া ও হেয় প্রতিপন্ন করার সর্বাত্মক চেষ্টাও চলতে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ শত্রুতার আগুন বংশ পরিক্রমার কয়েক ধাপ পর্যন্ত গড়াতে থাকে। এ সমস্ত ঝগড়া-বিবাদের কারণ খতিয়ে দেখলে অর্থকড়ি ও জায়গাজমিই বেশির ভাগ কারণ হিসেবে দেখা যাবে।  

টাকা-পয়সা এবং জমির বিবাদ রক্তের সম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্বের ঘনিষ্ট বন্ধনকেও মুহূর্তের মধ্যে শেষ করে দেয়। বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব চোখের পলকে শত্রুতায় পরিণত হয়। যৌথ ব্যবসার মূলনীতি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী এ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে, একটি প্রধান কারণ হল, পারস্পরিক মালিকানা অস্বচ্ছ থাকা, লেনদেন পরিষ্কার না রাখা। ইসলামের এক সোনালি শিক্ষা হল, 'ভ্রাতৃত্বের আবহে বসবাস কর। আর অপরিচিতের ন্যায় লেনদেন কর।' অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনে পরস্পরের সঙ্গে এমন আচরণ কর, যেমনটি এক ভাইয়ের অপর ভাইয়ের সাথে করা উচিত। ভদ্রতা, উদারতা, সহনশীলতা ও হৃদ্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাও। আচার-আচরণে ত্যাগ স্বীকার করে অপরকে প্রাধান্য দাও।

কিন্তু পারস্পরিক সুসম্পর্ক টাকা-পয়সার লেনদেন, থাকলেও এমনভাবে আদান প্রদান জায়গা-জমির অংশীদারিত্বের কারবার সম্পাদন কর, যেমন, দুজন অপরিচিত ব্যক্তি সম্পাদন করে থাকে। অর্থাৎ লেনদেন ও কায়-কারবারের প্রতিটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া উচিত। কারবারের কোনো দিকই যেন অস্পষ্ট না থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা উচিত।

পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং সুমধুর সম্পর্ক থাকাকালে যদি ইসলামের এ মূল্যবান ও শিক্ষার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে পরবর্তীতে উদ্ভূত অনেক ফেতনা-ফাসাদের পথ এখানেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের সমাজে এ মূল্যবান শিক্ষার প্রতি মোটেও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। উপরন্তু কেউ এ স্বচ্ছতার প্রস্তাব দিলে, তা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ঐক্যের পরিপন্থী বলে মনে করা হয়। প্রস্তাবকারীকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, যার ফল পরবর্তীতে সকলকে ভোগ করতে হয়। নিম্নে এ অস্বচ্ছতার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল- অনেক সময় দেখা যায়, ভাই-বেরাদার ও পিতা-পুত্র মিলে যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে। আর সাধারণত হিসাব-নিকাশ ছাড়াই প্রত্যেকে নিজ প্রয়োজন অনুপাতে তা হতে ব্যয় করতে থাকে। 

ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে কার কী অবস্থান, তা স্পষ্ট করা হয় না অংশী দারিত্বের ভিত্তিতে, না বেতনভিত্তিতে, নাকি সহযোগী হিসেবে। বেতন ভিত্তিতে হলে, বেতন কত, আর অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে হলে, তা কী পরিমাণ-এ সকল বিষয় অস্পষ্ট থাকে, কিছুই চূড়ান্ত করা হয় না। প্রত্যেকেই নিজ চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবসার অর্থ ব্যয় করতে থাকে। যদি কেউ বেতন বা অংশীদারিত্বের পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলে, তাহলে তা ঐক্য ও সম্প্রীতি পরিপন্থী মনে করা হয়। অথচ সমাজে প্রতিনিয়তই পরিলক্ষিত হচ্ছে, যে, এ ধরনের অস্বচ্ছ যৌথ ব্যবসার ফলে পরস্পরে ঝগড়া-বিবাদ জন্ম নিচ্ছে।

অন্তরে অন্তরে অসন্তোষ ও ক্ষোভ ধুমায়িত হচ্ছে। বিশেষত অংশীদারদের যখন বিয়ে-শাদি হয়ে যায়, তখন প্রত্যেকেই মনে করে, যে, অপর অংশীদাররা ব্যবসা দ্বারা বেশি সুবিধা লাভ করছে। আমার সাথে অবিচার করা হচ্ছে। তখন বাহ্যত পারস্পরিক সম্প্রীতি দৃষ্টিগোচর হলেও ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ ও ক্ষোভের লাভা উত্তপ্ত হতে থাকে। অবশেষে এ ক্ষোভ ও অবিশ্বাস পর্বতাকার ধারণ করে। আর তা আগ্নেয়গিরির রূপ নেয়। তখন ঐক্য আর সম্প্রীতির সব শ্লোগান মুখ থুবড়ে পড়ে। মৌখিক বচসা থেকে শুরু করে ঝগড়া-বিবাদ, মামলা- মোকদ্দমা কোনোটাই বাকি থাকে না। ভাইয়ে ভাইয়ে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে একে অপরের চেহারা দেখতেও তখন রাজি থাকে না। যার নিয়ন্ত্রণে ব্যবসার যে পরিমাণ থাকে, সে নির্দ্বিধায় ঐ পরিমাণের ভোগ দখল করতে থাকে।

আদল ও ইনসাফ তখন নীরবে নিভৃতে কাঁদে। অধিকন্তু প্রত্যেকেই নিজ নিজ আসরে অপরের কুৎসা রটনায় মগ্ন থাকে। আর যেহেতু দীর্ঘকাল যাবত চলতে থাকা এ যৌথ কারবারের কোনো মূলনীতি নির্ধারিত ছিল না। সুষ্ঠু হিসাব নিকাশও ছিল না, তাই দ্বন্দ সৃষ্টি হলে পারস্পরিক সমঝোতার বিষয়টিও অত্যন্ত জটিল হয়ে যায়। ন্যায়সঙ্গত সমাধান খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বার্থের দৃষ্টিতে ঘটনা বিশ্লেষণ করতে থাকে। ফলে সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য সমঝোতার কোনো উপায় বের করা সম্ভব হয় না বলাবাহুল্য, এ সকল ফেতনা ফাসাদের কারণ কেবল এটিই যে, ব্যবসার সূচনায় ও পরবর্তীতে অপর কেউ অংশগ্রহণের সময় কোনো মূলনীতি চূড়ান্ত করা হয়নি ।

যদি শুরুতেই কার কী অবস্থান হবে, কার কী দায়িত্ব কর্তব্য হবে, কার প্রাপ্য কী হবে, এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হত এবং তা লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা হত, তাহলে পরবর্তীতে সৃষ্ট অনেক ফেতনা ফাসাদের দ্বার শুরুতেই বন্ধ হয়ে যেত। কুরআন মজীদের সর্বাধিক দীর্ঘ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতিকে হেদায়েত দান করেছেন যে, “যখন তা লিখে রাখবে।” সাধারণ বাকি তোমরা বাকিতে লেনদেন করবে, তখন লেনদেনকেই যখন লিখে রাখার নির্দেশ মতো জটিল বিষয়টিতে কার প্রাপ্য কী দেওয়া হয়েছে, তখন যৌথ কারবারের হবে, তা লিখে রাখার গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়। এই নির্দেশ এজন্যই দেওয়া হয়েছে, যাতে পরবর্তীতে ঝগড়া-বিবাদ ও মতবিরোধ সৃষ্টি না হয়। আর হলেও তা ন্যয়নীতির সাথে সমাধান করা যায়।

অতএব, কোনো ব্যবসায় যদি একাধিক ব্যক্তি কাজ করে, তাহলে প্রথম ধাপেই এ বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া জরুরি, যে এ ব্যবসায় কার কী অবস্থান হবে। এমনকি যদি বাবার ব্যবসায় ছেলে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলেও প্রথমদিনেই এ বিষয়টি শরীয়তের দৃষ্টিতে চূড়ান্ত হওয়া জরুরি, যে, সে কি বেতনের ভিত্তিতে অংশীদার হিসেবে, কিংবা কেবল বাবার কাজ করবে, না ব্যবসার যথারীতি সাহায্যকারী হিসেবে। বেতনের ভিত্তিতে হলে বেতনের পরিমাণ নির্ধারিত হওয়া উচিত। 

আর যদি পিতা তাকে ব্যবসার মালিকানায় অংশীদার বানাতে চায়, তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে এর প্রথম শর্ত হল, ছেলের পক্ষ থেকে ব্যবসায় মূলধন যুক্ত করা (এ মূলধন সংযুক্তির একটি পন্থা এও হতে পারে যে, পিতা ছেলেকে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করবে। ছেলে দ্বারা ব্যবসার নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ ক্রয় করে নিবে।) দ্বিতীয় বিষয়টি লিখিত আকারে যৌথ ব্যবসার ডকুমেন্ট স্বরূপ সংরক্ষণ করা উচিত।' ডকুমেন্টে এ বিষয়টিও সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকা জরুরি যে, লভ্যাংশের কে কত শতাংশ পাবে। যাতে পরবর্তীতে কোনো প্রকার জটিলতা সৃষ্টি না হয়। 

অর্থ যদি কোনো অংশীদারের ব্যবসায় অধিক সময় দিতে হয়, অধিক দায়িত্ব পালন করতে হয়, তাহলে এ বিষয়টিও পরিষ্কার হওয়া উচিত, যে, অধিক কাজ কি বিনিময়হীন স্বেচ্ছা সেবা হিসেবে করবে, না এর বিনিময়ে সে পারিশ্রমিক বা লভ্যাংশের হার বৃদ্ধি করে নিবে। মোটকথা, দায়দায়িত্ব ও প্রাপ্য সকল বিষয়ই স্পষ্ট হওয়া জরুরি। আর যদি সহযোগী হিসেবে পিতার ব্যবসায় বিনিময়হীন স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে থাকে, তাহলে ব্যবসা হতে সে কিছুই পাবে না। বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত না করা হয়, যদি কারো যৌথ ব্যবসায় উপরোক্ত তাহলে অতি দ্রুত তা চূড়ান্ত করা তাচ্ছিল্য কিংবা উদারতা কোনো কিছুই বাঞ্ছনীয়। এ ব্যাপারে লজ্জা, তিরষ্কার, প্রতিবন্ধক হওয়া উচিত নয়। যৌথ সম্প্রীতি ও ঐক্যের পরিপন্থী মনে করা কারবারের এ স্বচ্ছতাকে পারস্পরিক মস্ত বড় শয়তানী ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়; বরং ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থায়িত্ব এ বাহ্য ভালবাসাই শত্রুতার জন্ম দিবে।

আরও পড়ুনঃ Time Machine | Bangla Golpo | Bangla Story - tricksky

স্বচ্ছতার উপরই নির্ভরশীল। অন্যথায় এ আর এজন্য ইসলামের সোনালী শিক্ষা হল, 'ভ্রাতৃত্বের আবহে বসবাস কর আর অপরিচিতের ন্যায় লেনদেন কর।'

আমাদের সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিষয়। তাই সাধারণত গৃহ ক্রয় বা নির্মাণ জন্যও এককভাবে গৃহ নির্মাণ বড় কঠিন পরিবারের একাধিক সদস্য মিলে নির্মাণ করলে, যৌথভাবেই হয়ে থাকে। বাবা বাড়ি অনুপাতে নিজেদের অর্থ দিয়ে থাকে। ছেলেরাও সামর্থ্য ছাড়াই হয়ে থাকে। (কী পরিমাণ দেওয়া সাধারণত তা কোনো বিষয় চূড়ান্ত করা হচ্ছে, তার হিসাবও রাখা হয় না।) তা কি ছেলের পক্ষ থেকে বাবার জন্য হাদিয়া-সহযোগিতা, না ঋণ, নাকি বাড়ির মালিকানায় অংশগ্রহণ কিছুই স্বচ্ছ থাকে না। অথচ হাদিয়া বা দান হলে বাড়ির মালিকানায় সে অংশীদার হবে না এবং এ টাকা সে কখনো ফেরত পাবে না। ঋণ হলে বাড়ির একক মালিকানা পিতার হবে, আর ছেলের প্রদত্ত অর্থ পিতার দায়িত্বে ঋণস্বরূপ থাকবে। আর যদি বাড়ির মালিকানায় অংশীদার হওয়ার জন্য টাকা দেওয়া হয়, তাহলে অর্থের পরিমাণ অনুযায়ী বাড়ির মালিকানা লাভ করবে। 

টেকনোলজি সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন:- www.tonbangla.com

বাড়ির মূল্য বৃদ্ধি ঘটলে, তার প্রাপ্য মালিকানারও মূল্য বৃদ্ধি পাবে। মোটকথা, প্রত্যেক অবস্থার ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু যেহেতু অর্থ দেওয়ার সময় কোনো বিষয় চূড়ান্ত করা হয়নি, প্রদত্ত টাকার হিসাবও রাখা হয়নি, তাই পরবর্তীতে কোনো বিরোধ দেখা দিলে; বিশেষ করে এ অবস্থায় বাবার মৃত্যু হলে উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টনে অবর্ণনীয় জটিলতার সৃষ্টি হয়। যারা গৃহ নির্মাণে অর্থ ব্যয় করেছে, তাদের সাথে অন্যদের সীমাহীন দ্বন্দ সৃষ্টি হয় । ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কখনো এ বিবাদে পুরো বংশ জড়িয়ে যায়। যদি ইসলামের সোনালী শিক্ষা অনুসরণ করে গৃহ নির্মাণের পূর্বেই এ বিষয়টি চূড়ান্ত করা হত, আর তা লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা হত, তাহলে পারিবারিক এ দ্বন্দ-কলহের সুযোগ সৃষ্টি হত না । গেলে পারস্পরিক দ্বন্দ-কলহও বড় আকার ধারণ করে। সে দ্বন্দ-কলহের উপযুক্ত কোনো সমাধানও খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন এ বিবাদ হাটে ঘাটে প্রসার লাভ করে। এমনকি কখনো আদালত পর্যন্ত গড়ায় । যদি শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী যথাসময়ে সম্পদ বণ্টন হয়ে যেত, তাহলে সকলের সন্তুষ্টিতে সব বিষয় মীমাংসা হয়ে যেত। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেত ।

উপরোক্ত আলোচনায় সমাজে প্রচলিত কেবল তিনটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হল। অন্যথায় সমাজে বিস্তৃত ঝগড়া-বিবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হলে দেখা যাবে, মালিকানার অস্বচ্ছতা ও লেনদেনের অপরিচ্ছন্নতা মহামারির আকার ধারণ করে আছে, যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে অসংখ্য অগণিত ফেতনা-ফাসাদ, দ্বন্দ-কলহ। লেনদেন ছোট হোক বা বড় তা পরিষ্কার হওয়া উচিত। তার শর্তসমূহ গচ্ছ ও অস্পষ্টতামুক্ত হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে কোনো সংকোচ, লজ্জা, উদারতা বা লৌকিকতা কোনো কিছুই প্রতিবন্ধক না হওয়া উচিত। এভাবে লেনদেনের শর্তসমূহ পরিষ্কার করে পারস্পরিক যত সদাচার করা যায় ততই ভালো। নিজে ত্যাগ স্বীকার করে অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করাই কাম্য। বলাবাহুল্য, উদ্দেশ্য এটিই  শরীয়তের এ নীতির-'ভ্রাতৃত্বের আবহে বসবাস কর আর অপরিচিতের ন্যায় লেনদেন কর।' অনুবাদ: ইসহাক কামাল

লম্বে তার।

পরিবারের কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে শরীয়তের নির্দেশ হল, অনতিবি- পরিত্যক্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকারদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে শরীয়তের এ নির্দেশ পালনে চরম অবহেলা- উদাসীনতা বিরাজমান। কোথাও তো হালাল-হারামের তোয়াক্কা না করে যে যা আমাদের সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্যও এককভাবে গৃহ নির্মাণ বড় পায়, তার উপরই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। কঠিন বিষয়। তাই সাধারণত গৃহ ক্রয় বা নির্মাণ পরিবারের একাধিক আবার কোথাও এমন মন্দ নিয়ত না থাকলেও অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে সম্পত্তি বণ্টন করা হয় না। 

যদি মৃত ব্যক্তির কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য থাকে, তাহলে জীবদ্দশায় যে সন্তান তার দেখাশুনা বা সহযোগিতা করত, সেই তা দেখাশোনা করতে থাকে। কিন্তু এ বিষয়টি পরিষ্কার করা হয় না, যে, এখন ব্যবসার মালিকানা, কার, আর তা কী পরিমাণ। উত্তরাধিকারীদের অংশ কী হারে পরিশোধ করা হবে। ব্যবসায় যে ভাই শ্রম দিচ্ছে, সে এর বিনিময়ে কী সদস্য মিলে যৌথভাবেই হয়ে থাকে। বাবা বাড়ি নির্মাণ করলে, ছেলেরাও সামর্থ্য অনুপাতে নিজেদের অর্থ দিয়ে থাকে। সাধারণত তা কোনো বিষয় চূড়ান্ত করা ছাড়াই হয়ে থাকে। (কী পরিমাণ দেওয়া হচ্ছে, তার হিসাবও রাখা হয় না।) তা কি ছেলের পক্ষ থেকে বাবার জন্য হাদিয়া-সহযোগিতা না ঋণ, নাকি বাড়ির মালিকানায় অংশগ্রহণ কিছুই স্বচ্ছ থাকে না। অথচ হাদিয়া বা দান হলে বাড়ির মালিকানায় সে অংশীদার হবে না এবং এ টাকা সে কখনো ফেরত পাবে না। 

আপনি কী Nokia বাটন ফোম কেনার চিন্তা করছেন তাহলে এখনই ক্লিক করুন এখানে ক্লিক করুন

ঋণ হলে বাড়ির একক মালিকানা পিতার হবে, আর ছেলের প্রদত্ত অর্থ পিতার দায়িত্বে খাণস্বরূপ থাকবে। আর যদি বাড়ির মালিকানায় অংশীদার পাবে; বরং কেউ যদি সম্পত্তি বন্টনের হওয়ার জন্য টাকা দেওয়া হয়, তাহলে অর্থের পরিমাণ অনুযায়ী বাড়ির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাহলে তার এ মালিকানা লাভ করবে। বাড়ির মূল্য বৃদ্ধি ঘটলে, তার প্রাপ্য মালিকান- প্রস্তাবকে সমাজে ঘৃণিত ও দোষনীয় মনোরও মূল্য বৃদ্ধি পাবে। মোঁকথা, প্রত্যেক অবস্থার ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন।  করা হয়। বলা হয় মূর্ত ব্যক্তির কাফনও কিন্তু যেহেতু অর্থ দেওয়ার সময় কোনো বিষয় চূড়ান্ত করা হয়নি, প্রদত্ত এখনো পুরাতন হয়নি, জীবিতরা সম্পদ টাকার হিসাবও রাখা হয়নি, তাই পরবর্তীতে কোনো বিরোধ দেখা ভাগ বাটোয়ারার ধান্ধায় পড়ে গেছে। দিলে; বিশেষ করে এ অবস্থায় বাবার মৃত্যু হলে, উত্তরাধিকার সম্পদ অথচ এ বণ্টন শরীয়তের নির্দেশ, স্বচ্ছ মালিকানার দাবিও বটে। কিন্তু এদিকে বণ্টনে অবর্ণনীয় জটিলতার সৃষ্টি হয়। যারা গৃহ নির্মাণে অর্থ ব্যয় ভ্রুক্ষেপ নেই। আর এ অবহেলার করেছে, তাদের সাথে অন্যদের সীমাহীন দ্বন্দ সৃষ্টি হয়। ভ্রাতৃত্বের ফলাফলই কিছুদিন পর প্রকাশ পেতে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কখনো এ বিবাদে পুরো বংশ জড়িয়ে যায় । 

থাকে সময় অতিবাহিত হলে পরস্পরের যদি ইসলামের সোনালী শিক্ষা অনুসরণ করে গৃহ নির্মাণের পূর্বেই এ বিষয়টি চূড়ান্ত করা হত, আর তা লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা হত, তাহলে পারিবারিক এ দ্বন্দ-কলহের সুযোগ সৃষ্টি হত না। নিজ প্রাপ্য ও অধিকারের কথা স্মরণ হয়। অসন্তোষ ও ক্ষোভ জন্মাতে থাকে। সময়ের ব্যবধানে পরিত্যক্ত সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধিতে বড় ধরনের তারতম্য ঘটে।

আজকের পোস্ট যদি আপনার কাছে ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করুন। এই পোস্টটি সম্পন্ন ইসলামের দৃষ্টিতে করা হয়েছে। ধন্যবাদ। 


Next Post Previous Post
1 Comments
  • Md Shamim Hossain
    Md Shamim Hossain 30 September 2022 at 14:52

    Good post

Add Comment
comment url