গোল আলুর (Potato) পরিচিতি ও এর উৎপাদন এর সব কৌশল জেনে নিন

স্থানীয়ভাবে আলু হিসেবে পরিচিত গোল আলু বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি এবং পরিপূরক খাদ্যফসল যা বিশ্বে উৎপাদনের দিক থেকে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। একক সময়ে একক জমিতে সর্বাধিক উৎপাদনের কারণে দিন দিন আলু চাষে জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে প্রায় ৪.৬৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে 109.491 লক্ষ মে.টন টন আলু উৎপাদিত হয়। আলুর মোট উৎপাদন দেশের চাহিদার তুলনায় বেশি বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেন। কারণ এখনও আলুকে আমাদের দেশে সবজি হিসেবে চিন্তা করা হয়। যদিও আলুর বহুবিধ ব্যবহার ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। চিপস্, ক্রিপস, ফ্লেস্ক ও ফেন্সফ্রাই তৈরিতে আলু ব্যবহার হচ্ছে এবং দিন দিন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। রপ্তানির মাধ্যমে আলু ফসলের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। আলু ফসলের গুরুত্ব অনেক গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বীজ আলু, খাবার আলু, আগাম আলু, প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য আলু ও রপ্তানির যোগ্য আলু উৎপাদনের জন্য কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতির উৎপাদন কৌশল ব্যবহার করা দরকার। নিম্নে আলু উৎপাদনের পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হলো। পুষ্টি মূল্য আলু পুষ্টির দিক দিয়ে ভাত ও গমের সাথে তুল্য। এছাড়া খাদ্য হিসাবে আলু সহজেই হজম হয়। আলুতে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য শক্তি রয়েছে। তাছাড়া ভিটামিন ও খনিজ লবণও পাওয়া যায়।

ব্যবহার আলু দিয়ে মিষ্টি, সেমাই, নানা রকম ভর্তাসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। তরকারি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও প্রক্রিয়াজাত করে চিপ্স বিক্রি করে গৃহবধূ ও মেয়েরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট এখন পর্যন্ত ৯১ টি আলুর জাত উদ্ভাবন করেছে। নিম্নে কিছু জাতের বর্ণনা দেয়া হলো: বাংলাদেশের বহুল পরিচিত ও চাষকৃত জাতসমূহ:-

বৈশিষ্ট্য :-

•কান্ডের সংখ্যা কম কিন্তু লম্বা ও শক্ত। পাতা একটু বড় ও গাঢ় সবুজ।

• আলু ডিম্বাকার, মাঝারি থেকে বড় আকৃতির।

• ত্বক মসৃণ এবং রং হালকা হলুদের।

•শাঁস হালকা হলুদের ও চোখ অগভীর।

• জাতটি সারা দেশেই চাষ করা যায়।

বৈশিষ্ট্য :-

• গাছ শক্ত ও দ্রুত বেড়ে উঠে। কান্ডের সংখ্যা কম ও লম্বা।

• পাতার প্রান্ত কিছুটা ঢেউ খেলানো

• আলু ডিম্বাকার, মাঝারি আকার। ত্বক মসৃণ ও লাল বর্ণের

• শাঁস হলদে ও চোখ অগভীর, জাতটি মড়ক ও ভাইরাস রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।

বৈশিষ্ট্য :-

• গাছ খাড়া ও গড়ে প্রতি গাছে ৩-৪ টি কান্ড থাকে।

• পাতা বড়, সবুজ ও ছড়ানো, গাছের গঠন ও পাতার বিন্যাস চমৎকার আলু ডিম্বাকার থেকে লম্বাকৃতির, মাঝারি থেকে বড় আকৃতির।

• মসৃণ লাল ত্বক ও  শাঁসের রং ফ্যাকাশে হলুদ ও চোখ অগভীর

• প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী।

• খাবার আলু হিসেবেও জনপ্রিয়।

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন এবং গড়ে ৪/৫টি কান্ড থাকে কান্ড সবুজ এবং এন্থোসায়ানিন এর বিস্তৃতি বেশি।

• আলু ডিম্বাকৃতি থেকে লম্বাকৃতি ও মধ্যম আকারের,  আলুর রং লাল

• চোখ অগভীর প্রক্রিয়াজাতকরণ ও খাবার উপযোগী।

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ মাধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন এবং গড়ে

৪/৫টি কান্ড থাকে। কান্ড সবুজ এবং এন্থোসায়ানিন এর বিস্তৃতি বেশি আলু গোলাকার থেকে চ্যাপ্টা গোলাকার আকারের।

•আলুর রং গাঢ় লাল, চামড়া মসৃণ।

•আলুর শাসের রং হালকা হলুদ। চোখ মধ্যম অগভীর।

•জাতটি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও খাবার উপযোগী।

বৈশিষ্ট্য:-

•গাছ কিছুটা ছড়ানোর প্রকৃতির।

• কান্ডের সংখ্যা বেশি ও সবুজ, খরা সহ্য করার ক্ষমতা আছে।

• আলু গোল-ডিম্বাকার মাঝারি আকৃতির, ত্বক মসৃণ হালকা তামাটে হলুদ, শাঁস ফ্যাকাশে ও চোখ অগভীর।

•সারা দেশেই চাষ করা যায়।

• আলু ৪-৫ মাস ঘরে রাখা যায়।

• মড়ক ও অন্যান্য ভাইরাস রোগ প্রতিরোধী।

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন।

• গড়ে ৪/৫ টি কান্ড থাকে। কান্ড শক্ত ও খাড়া আংশিক হেলানো।

• পাতা মাঝারি ও গাঢ় সবুজ, আলু গোল থেকে ডিম্বাকৃতি।

• রং লাল ও চামড়া মসৃণ, আলুর শাসের রং হলুদাভ সাদা, চোখ হালকা গভীর।

• প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী।

বৈশিষ্ট্য :-

•ডিম্বাকৃতি, বড়, রং হালকা হলুদাভ, চামড়া মসৃণ।

• আলুর শাঁসের রং হালকা হলুদাভ।

• চোখ অগভীর।

• প্রক্রিয়াজাতকরণ উপযোগী

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন আকৃতিরজকান্ড  সবুজ কিন্তু গোড়ার দিকে এন্থোসায়ানিনের বিস্তৃতি খুবই বেশি।

•কান্ড ৩-৬ টি থাকে,  পাতা মধ্যম আকার, কম ঢেউ খেলানো কিন্তু মধ্য শিরায় এন্থোসায়ানিনের,  বিস্তৃতি খুবই বেশি।

•আলু খাট ডিম্বাকৃতি থেকে ডিম্বাকৃতির, মধ্যম আকারের আলুর চামড়ার রং লাল, শাঁসের রং,  হলুদ এবং চোখের গভীরতা মধ্যম

•বিশেষ বৈশিষ্ট্য: আগাম জাত হিসেবে

চাষ করা যায়।

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন ইন্টারমিডিয়েট টাইপ এবং কান্ড সবুজ কিন্তু গোড়ার দিকে এন্থোসায়ানিন এর বিস্তৃতি কম।

•৩-৬ টি কান্ড থাকে। পাতা ছোট আকারের, কম ঢেউ খেলানো এবং মধ্য শিরায় এন্থোসায়ানিনের বিস্তৃতি খুবই কম বা থাকে না। আলু মাঝারি আকারের, ডিম্বাকৃতি থেকে লম্বা ডিম্বাকৃতির। চামড়ার রং হলুদ, শাঁসের রং হালকা হলুদ। অগভীর চোখবিশিষ্ট।

•এ জাতটি খাবার উপযোগী।

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন লিফি টাইপ এবং গড়ে ৪-৬টি কান্ড থাকে। •গাছ কিছুটা খাড়া প্রকৃতির ও শাখা প্রশাখা খুবই কম।

•কান্ড সবুজ মাঝারি ধরনের মোটা এবং এন্থোসায়ানিন এর বিস্তৃতি

বেশি।

•পাতা মাঝারি আকারের ও কম ঢেউ খেলানো আলু লম্বা ডিম্বাকৃতি ও বড় আকারের আলুর চামড়া মসৃণ ও রং লাল, শাঁসের রং হালকা হলুদ।

•চোখ অগভীর ও চোখ আলুতে সমভাবে বিন্যস্ত।

•এ জাতটি নাবিধ্বসা রোগ প্রতিরোধী এবং খাবার আলু হিসাবে ভাল।

বৈশিষ্ট্য :-

•আলুর চামড়া মসৃণতা মাঝারি ও রং হলুদ, শাঁসের রং হলুদ।

•চোখ অগভীর ও চোখ আলুতে সমভাবে বিন্যস্ত।

•এ জাতটি নাবিধ্বসা রোগ প্রতিরোধী।

•আলুতে শুঙ্ক পদার্থ (১৮.৮০%)

বৈশিষ্ট্য :-

•আলুডিম্বাকৃতি ও মাঝারি আকারের।

•পেচাখঅগভীর ও চোখআলুতেসমভাবে বিন্যস্ত।

•এ জাতটি নাবিধ্বসা রোগ প্রতিরোধী।

•আলুতে শুঙ্ক পদার্থ (১৮.৪৯%)

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন।

•গড়ে ৪/৫ টি কান্ড থাকে। কান্ড শক্ত ও খাড়া আংশিক হেলানো।

•পাতা মাঝারি ও গাঢ় সবুজ,  আলু গোলাকার, রং লাল ও চামড়া মসৃণ।

•আলুর শাসের রং হলুদাভ সাদা, চোখ হালকা গভীর।

•প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী।

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন,গড়ে ৪/৫ টি কান্ড থাকে। কান্ড শক্ত, খাড়া ও আংশিক হেলানো।

•পাতা মাঝারি ও গাঢ় সবুজ।

•আলু গোল থেকে ডিম্বাকৃতি, রং লাল ও চামড়া মসৃণ

•আলুর শাসের রং হলুদাভ সাদা, চোখ হালকা গভীর

• প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী।

বৈশিষ্ট্য:-

•গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন ইন্টারমিডিয়েট টাইপ এবং কান্ড সবুজ

এবং এন্থোসায়ানিন এর বিস্তৃতি কম।

•পাতা মধ্যম আকৃতির, কম ঢেউ খেলানো এবং মধ্য শিরায় এন্থোসায়ানিন এর বিস্তৃতি কম।

•আলু লম্বা ডিম্বাকৃতি ও মধ্যম থেকে বড় আকারের।

•আলুর রং হলুদ, চামড়া মসৃণ, আলুর শাসের রং সাদা।

•চোখ মধ্যম গভীর, জাতটি নাবিধ্বসা রোগ প্রতিরোধী।

•প্রক্রিয়াজাতকরণ ও খাবার উপযোগী।

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন ইন্টারমিডিয়েট টাইপ এবং গড়ে ৪-

৬টি কান্ড থাকে।

•গাছ কিছুটা খাড়া প্রকৃতির ও শাখা প্রশাখা মধ্যম।

• কান্ড সবুজ মাঝারি ধরনের মোটা এবং এন্থোসায়ানিন এর বিস্তৃতি কম আলু গোলাকার (চাপা) ও মধ্যম

আকারের।

•আলুর চামড়ার মসৃণতা মাঝারি রং হলুদ, শাঁসের রং সাদা এবং চোখের গভীরত মধ্যম চোখ আলুতে সমভাবে বিন্যস্ত নয়।

•জাতটি প্রক্রিয়াজাতকরণ উপযোগী

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ মধ্যম উচ্চতাসম্পন্ন ইন্টারমিডিয়েট টাইপ এবং গড়ে ৪-৭টি কান্ড থাকে।

•গাছ কিছুটা খাড়া প্রকৃতির ও শাখা-প্রশাখা মাঝারি।

•কান্ড সবুজ মাঝারি ধরনের মোটা আলুর চামড়ার মসৃণতা মাঝারি ও রং হলুদ, শাঁসের রং হালকা হলুদ।

•চোখ গভীরতা মাঝারি ও চোখ আলুতে সমভাবে বিন্যস্ত নয়।

•জাতটি প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী।

বৈশিষ্ট্য :-

•গাছ খাড়া ও গড়ে প্রতি গাছে ৩-৪ টি কান্ড থাকে।

•পাতা বড়, সবুজ ও ছড়ানো, গাছের গঠন ও পাতার বিন্যাস চমৎকার।

• আলু ডিম্বাকার থেকে লম্বাকৃতির, মাঝারি থেকে বড় আকৃতির।

• মসৃণ লাল ত্বক শাঁসের রং ফ্যাকাশে হলুদ ও চোখ অগভীর।

•প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী।

•খাবার আলু হিসেবেও জনপ্রিয়।

বৈশিষ্ট্য :-

•কান্ড সবুজ কিন্তু গোড়ার দিকে এন্থোসায়ানিন এর বিস্তৃতি মাঝারি।

•পাতা মাঝারি আকারের, কম ঢেউ খেলানো এবং মধ্য শিরায় এন্থোসায়ানিনের বিস্তৃতি গাঢ়।

•আলু মাঝারি থেকে বড় আকারের, ডিম্বাকৃতি থেকে লম্বা ডিম্বাকৃতির।

•চামড়ার রং লাল। অগভীর চোখ বিশিষ্ট।

টেকনোলজি সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন:- www.tonbangla.com