পবিত্র মাহে রজানের ১ম দিয়েই কেয়ামতের বড় আলামত প্রকাশ পেল | On the 1st day of the holy month of Ramadan, the great sign of doomsday was revealed

 পবিত্র মাহে রজানের ১ম দিয়েই কেয়ামতের বড় আলামত প্রকাশ পেল

On the 1st day of the holy month of Ramadan, the great sign of doomsday was revealed

চিত্র: পবিত্র রমজান এর প্রথম রোজার দিনের ছবি।


কেয়ামতের ছোট ও বড় আলামতগুলো কী কী?

আসসালামু আলাইকুম, কেয়ামতের পূর্বে কেয়ামতের নিকটবর্তিতার প্রমানস্বরুপ যে আলামত গুলো প্রকাশ পাবে সেইগুলো হলো ছোট ও বড় আলামত ইসলামের পরিভাষাতে আখ্যায়িত করা হয়। ছোট আলামত গুলো কেয়ামতের আলামতের অনেক আগেই প্রকাশিত হইবে। এই ছোট আলামত গুলো এর মধ্যই প্রকাশ হয়েছে, এবং তা নিঃশেষ ও হয়েছে। এমন অনেক আলামত রয়েছে যা প্রকাশ এখনও হয় নী। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ সাল্লামের সংবাদ অনুযায়ি সেগুলো সেগুলো খুবই দ্রুতই প্রকাশ হইবে কেয়ামতের বড় বড় আলামত। এই সব আলামত গুলো প্রকাশ পাবে এবং মানুষকে বড় ছোট সংকেত দিবে, যে কেয়ামত খুবই নিকটে। বর্তমান কেয়ামতের ছোট ছোট আলামতের সংখ্যা অনেক, এই বিষয়ে অনেক সহিহ হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে। এই হাদিস গুলোর শুধু প্রাসঙ্গিক অংশটুকু উল্লেখ করব।


কেয়ামতের কিছু ছোট ছোট আলামতের মধ্যে যা যা রয়েছে:

০১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভ।


০২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু।


০৩. বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়।


০৪. ফিলিস্তিনের “আমওয়াস” নামক স্থানে প্লেগ রোগ দেখা দেয়া।


০৫. গ্রামে গ্রামে ঘন ঘন মসজিদ হওয়া। 


০৬. নানারকম গোলযোগ (ফিতনা) সৃষ্টি হওয়া। যেমন ইসলামের শুরুর দিকে উসমান (রাঃ) এর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া, জঙ্গে জামাল ও সিফফিন এর যুদ্ধ, খারেজিদের আবির্ভাব, হাররার যুদ্ধ, কুরআন আল্লাহর একটি সৃষ্টি এই মতবাদের বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি।


০৭. নবুয়তের মিথ্যা দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ। যেমন- মুসাইলামাতুল কাযযাব ও আসওয়াদ আনসি।


০৮. হেজাযে আগুন বের হওয়া। সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি ৬৫৪হিঃ তে এই আগুন প্রকাশিত হয়েছে। এটা ছিল মহাঅগ্নি। তৎকালীন ও তৎপরবর্তী আলেমগণ এই আগুনের বিবরণ দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন ইমাম নববী লিখেছেন- “আমাদের জামানায় ৬৫৪হিজরিতে মদিনাতে আগুন বেরিয়েছে। মদিনার পূর্ব পার্শ্বস্থ কংকরময় এলাকাতে প্রকাশিত হওয়া এই আগুন ছিল এক মহাঅগ্নি। সকল সিরিয়াবাসী ও অন্য সকল শহরের মানুষ তাওয়াতুর সংবাদের ভিত্তিতে তা অবহিত হয়েছে। মদিনাবাসীদের মধ্যে এক ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যিনি নিজে সে আগুন প্রত্যক্ষ করেছেন।”


০৯. আমানতদারিতা না-থাকা। আমানতদারিতা ক্ষুণ্ণহওয়ার একটা উদাহরণ হচ্ছে- যে ব্যক্তি যে দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয় তাকে সে দায়িত্ব প্রদান করা।


১০. ইলম উঠিয়ে নেয়া ও অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করা। ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে আলেমদের মৃত্যু হওয়ার মাধ্যমে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম এরসপক্ষে হাদিস এসেছে।


১১. মানুষের মধ্যে ব্যভিচার বেড়ে যাওয়া।


১২. মানুষ সুদ ব্যবসা ও সুদ ছড়িয়ে পড়া।


১৩. বাদ্য যন্ত্র ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাওয়া।


১৪. মদ্যপান বেড়ে যাওয়া ও ছোট ছেলে মেয়েরা ধূমপান করা। 


১৫. বকরির রাখালেরা সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করা।


১৬. মানুষ হত্যা বেড়ে যাওয়া ও মানুষে মানুষে ঝগড়া বিবাদ করা। 


১৭. অধিকহারে ভূমিকম্প হওয়া।


১৮. মানুষের আকৃতি রূপান্তর, ভূমি ধ্বস ও আকাশ থেকে পাথর পড়া।


১৯. কাপড় পরিহিতা সত্ত্বেও উলঙ্গ এমন নারীদের বহিঃপ্রকাশ ঘটা। যা বর্তমান ইউটিউব বা ফেসবুকে দেখা যায়।


২০. মুমিনের স্বপ্ন সত্য হওয়া।


২১. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া বেড়ে যাওয়া,  সত্য সাক্ষ্য লোপ পাওয়া যা বর্তমান বেশি হয়।


২২. নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, বর্তমান নারীরা বেশি।


২৩. আরব ভূখণ্ড আগের মত তৃণভূমি ও নদনদীতে ভরে যাওয়া।


২৪. একটি স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীর উৎস আবিষ্কৃত হওয়া।


২৫. হিংস্র জীবজন্তু ও জড় পদার্থ মানুষের সাথে কথা বলা।


২৬. রোমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং মুসলমানদের সাথে তাদের যুদ্ধ হওয়া, যা বর্তমান হচ্ছে।


২৭. প্রচুর ধনসম্পদ হওয়া এবং যাকাত খাওয়ার লোক না থাকা। 


এই আলামত গুলো আমরা বর্তমান দেখি বা যা যা হচ্ছে।


বড় বড় ১০ টি আলামত নিচে উল্লেখ করা হলো:

০১. দাজ্জাল

০২. ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ) এর নাযিল হওয়া।

০৩. ইজাজুজ ও মাজুজ।

০৪. পূর্বে পশ্চিমে ও আরব উপদ্বীপ তিনটি ভূমিধ্বস হওয়া।

০৫. ধোঁয়া

০৬. সূর্যাস্তের স্থান হতে সূর্যোদয়।

০৭. বিশেষ জন্তু, এমন আগ্তনের বহিঃপ্রকাশ যা মানুষকে মানুষকে হাশরেরে মাঠে নিয়ে যাবে। 

এই আলামত গুলো একটার পর একটা প্রকাশ হতে থাকবে। প্রথমটি প্রকাশিত হওয়ার অব্যবহিত পরেরটি প্রকাশ পাবে। ইমাম মুসলিম হুযাইফা বিন আসিদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কথাবার্তা বলতে দেখে বললেন: তোমরা কি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছ? সাহাবীগণ তখন বলল: আমরা কেয়ামত নিয়ে আলোচনা করছি। তখন তিনি বললেন: নিশ্চয় ১০ টি আলামত সংঘটিত হওয়ার আগে কেয়ামত হবে না। তখন তিনি ধোঁয়া, দাজ্জাল, বিশেষ জন্তু, সূর্যাস্তের স্থান হতে সূর্যোদয়, ঈসা বিন মরিয়মের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজ, পূর্ব-পশ্চিম ও আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমি ধ্বস এবং সর্বশেষ ইয়েমেনে আগুন যা মানুষকে হাশরের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে উল্লেখ করেন। এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা কী হবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট সহিহ কোন দলীল পাওয়া যায় না। প্রথমে দাজ্জালকে পাঠানো হবে। তারপর ঈসা বিন মরিয়ম এসে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তারপর ইয়াজুজ-মাজুজ বের হবে। সাফফারিনী (রহঃ) তাঁর রচিত আকিদার গ্রন্থে এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু তাঁর নির্ণয়কৃত এ ধারাবাহিকতার কোন কোন অংশের প্রতি মন সায় দিলেও সবটুকু অংশের প্রতি মন সায় দেয় না। তাই এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- কেয়ামতের বড় বড় কিছু আলামত আছে। এগুলোর কোন একটি প্রকাশ পেলে জানা যাবে, কেয়ামত অতি সন্নিকটে। কেয়ামত হচ্ছে- অনেক বড় একটা ঘটনা। এই মহা ঘটনার নিকটবর্তিতা সম্পর্কে মানুষকে আগেভাগে সতর্ক করা প্রয়োজন বিধায় আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের জন্য বেশ কিছু আলামত সৃষ্টি করেছেন।


কিয়ামতের বড় ১০টি আলামত প্রকাশ পাওয়া শুরু হওয়ার পরে প্রকাশিত হবে তার সংখ্যা ৯ টি।

নিচে তা বর্ণনা করা হলো:

১. মদিনা থেকে সকল কাফের মুনাফিক বের হয়ে যাবে।


২. মুসলমানদের সাহায্যে বৃক্ষকুল কথা বলবে।


৩. মুসলমানদের সাহায্যে পাথর কথা বলবে।


৪. ইহুদীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সর্বশেষ যুদ্ধ হবে এবং মুসলিমরা বিজয়ী হবে।


৫. একটি মাত্র সেজদা সারা দুনিয়া অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতা লাভ করবে।


৬. এমন বৃষ্টি, যা সকল জনপদকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। 


৭. মুমিনদের রূহ ছাড়িয়ে নিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুবাতাস প্রেরণ করা হবে।


৮. কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে সকল মুমিনের মৃত্যু হবে।


৯. কাগজের পাতা এবং মানুষের অন্তর থেকে কুরআন উঠিয়ে নেয়া হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url