এক টুকরো আগুন বাংলা গল্প ছোটদের জন্য

 
এক টুকরো আগুন বাংলা গল্প

আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই আল্লাহ্‌র রহমতে ভালআছেন। নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন। আজকের পোস্ট এ আপনারা জানতে একটুকরো আগুন গল্পটি। তো চলুন শুরু করা যাক- হ্যা, অবশ্যই গল্পটি ময়োযোগ দিয়ে পড়ুন!

একটুকরো আগুন গল্পটি লিখেছেন- সরদার ফজলুল করিম।

এক টুকরো আগুন

কেন যে ইউরোপ থেকে লোকগুলো গিয়ে আমেরিকার যারা আসল অধিবাসী, তাদেরকে 'রেড ইণ্ডিয়ান’ বলতে শুরু করল, তা আমরা জানিনে। তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছ যে, কলম্বাস ভারতবর্ষ আসার জন্য জাহাজ ভাসিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকা আর মনে করেছিলেন এটাই ইণ্ডিয়া (ভারতবর্ষ)। হয়ত সেই ভুল থেকেই আমেরিকার আদিম অধিবাসীদের ইউরোপের লোকেরা নাম দিয়েছিল ‘ইণ্ডিয়ান’। আসলে আমেরিকার প্রাচীন অধিবাসীরা ইণ্ডিয়ান নয়। তবু সেই ভুল নামেই তাদের পরিচয়। সে যাহোক রেড ইণ্ডিয়ানদের সেই আদি সমাজের সহজ জীবন-যাপনের সুন্দর সুন্দর কাহিনী আছে। তারই একটি বলছি। শীতের দেশে ওদের বাস। প্রকৃতির সহজ সন্তান। মানুষ বলে বনের বাঘ-ভালুক, হরিণ এমনকি বাদুর কিংবা কাঠবেড়ালী থেকেও নিজেদের ওরা আলাদা ভাবে না। পশু- পাখীর নামেই ওদের নাম। কোন গোত্র বা দলের নাম হরিণ; কোন দলের নাম নেকড়ে বাঘ । কারুর নাম দুরন্ত ইঁদুর। সেবার শীত পড়ল যেন সবচেয়ে বেশী। তুষার পড়তে পড়তে গাছ আর লতাপাতা সাদা হয়ে গেছে। পশু-পাখি সবারই শীত। কিন্তু রেড ইণ্ডিয়ানদের শীত সবচেয়ে বেশী। কারণ, তারা তো মানুষ । পশুর মত গা ভর্তি পশম তো তাদের নেই। গায়ে দেবার মত পশুর চাপড়া ও কম্বল যা ছিল তাতেও আর কুলাচ্ছিল না। কারণ, শীতকে দূর করতে পারে যে আগুন সেই আগুনই তাদের নেই। কিন্তু কি করা যায় ? রেড ইণ্ডিয়ানদের মধ্যে হরিণ নামের গোত্রেরই তখন রাজত্ব। রাজা তাই তার প্রজাপারিষদের সভা ডাকল। সভায় সকলেরই প্রশ্ন – কি করে আমরা বাঁচব ? একটু আগুন হলেই তো আমরা কাঠ জ্বালিয়ে আমাদের থাকার তাঁবুগুলো গরম করতে পারতাম । রাজা বলল, কিন্তু আগুন কে আনবে ? সব আগুন যে পাহারা দিচ্ছে দূরে তালপুকুরের পাড়ে দুই থুথুরে ডাইনী বুড়ী। ওরা পণ করেছে রেড ইণ্ডিয়ানদের ওরা কিছুতেই আগুন দেবে না । তাই দিন-রাত পাহারা দিচ্ছে সে আগুন। আমাদের কত বীর সে আগুন আনতে গিয়ে প্রাণ দিল তার ইয়ত্তা কি ? থুথুরে বুড়ী হলে কি হবে— ওরা প্রায় বাতাসের মতো দৌড়াতে পারে। আর সাপকে ওরা পালন করে। সে আগুনে-বুড়ী দুটোর ভয় কেবল. পানির।

গল্পের গল্প তাহলে উপায় কি ? কারু মুখে কোন কথা যোগায় না। সভা চিন্তায় একবারে চুপ। কিন্তু উঠে দাঁড়াল রাজার ছোট্ট ছেলেটি। নাম তার দুরন্ত ইঁদুর। দুরন্ত ইঁদুর বলল, বাবা, পালুক না বুড়ীরা সাপ, আমাদেরও তো বন্ধু রয়েছে হরিণ। আর হরিণও তো খটাখট ছুটতে পারে বাতাসের মতো। রাজা বলল- হাঁ, তা পারে বটে, কিন্তু হরিণের শিং দুটো যা বাঁশঝাড়ের মতো বড় ডালপালা ভরা, তাতে ও তো আগুনে-বুড়ীদের তাঁবুর মধ্যে ঢুকতে পারবে না। কিন্তু দরন্ত ইঁদুর হটবার পাত্র নয়। সে বলল, আমার বন্ধু নেকড়েও তো রয়েছে। ওকে আমি ছোটকাল থেকে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করেছি। ওর তো আর হরিণের মতো শিং নেই । এমন জবাবের সাথে কি কেউ আর পেরে ওঠে! সবাই তাই দুরন্ত ইঁদুরকে বলল, যাও বাছা, তোমার বন্ধু নেকড়ে বাঘকে বলো, ও যদি আমাদের জন্য কোনোভাবে এক টুকরা আগুন এনে দিতে পারে, তাহলে রোজ ওকে আমরা খুব করে খাওয়াব। দুরন্ত ইঁদুর ছুটে চলল নেকড়ে বাঘের গুহার দিকে । গুহায় পৌঁছেই বলল, বন্ধু নেকড়ে বাঘ, আমার বাবা-মা, ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন আর গোত্রের সব লোক শীতে বড় কষ্ট পাচ্ছে। ঐ দূরে দুই ডাইনী বুড়ী পাহারা দিচ্ছে আগুনকে। তুমি যদি একটু আগুন এনে দিতে পার তবে আমরা সবাই তোমাকে খু-উ-ব ভালবাসবো । নেকড়ে বাঘ বলল, ছোট্ট বন্ধু, তুমি আমাকে আমার ছোটকাল থেকে পালন করেছ। আমি কি তোমার উপকার না করে পারি। তুমি কোন চিন্তা কোরো না, আমি যেমন বলছি তেমনিভাবে কাজ করো। তুমি দৌড়ে চলে যাও পুকুরটা ছাড়িয়ে ডাইনী বুড়ীদের তাঁবুর কাছে। ঝোপঝাড়ের মধ্যে তুমি লুকিয়ে থেকো। আমি যখন তিনবার কাশি দিয়ে উঠব তুমি তখন চিৎকার করে লড়াই-এর আওয়াজ তুলবে। কথামতো দুরন্ত ইঁদুর ছুটে চলল আগুনে-বুড়ীদের তাঁবুর দিকে। নেকড়ে বাঘও এসে দাঁড়াল পুকুরটার পাড়ে। এসে হুঙ্কার ছেড়ে ডাদিল বনের পশু- পাখী সবাইকে— “ভাইসব! এই মুহূর্তে এসে সবাই হাজির হও। জরুরী বিষয়ে আলোচনা হবে।” ডাক দিতে না দিতেই হাজির হলো এসে মোটা পা থপ্ থপ্ করতে করতে ভালুক। খটাখট্ খটাখট্ করে খুরের আওয়াজ তুলে তীরের মতো এলো হরিণ। গাছ থেকে লেজ নাড়তে নাড়তে লাফিয়ে পড়ল কাঠবিড়ালী। ডানা ঝাপটে গাছের ডালে এসে ঝুলে দাঁড়াল বাদুড়। পুকুর থেকে ব্যাংও মাথা তুলে ডাকল : ঘ্যাংগর-ঘ্যাং - বলল, বলো, কি আমাদের করতে হবে? সবাই যখন হাজির হল, নেকড়ে বাঘ তখন শুরু করলঃ বনবাসী ভাইসব, তোমরা জানো শীতকালে সূর্য তেমন আলোই দেয় না। শীতে আমরা কত কষ্ট পাই। কিন্তু, আমাদের বন্ধু দুরন্ত ইঁদুর তো মানুষ। তার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন আর গোত্রের সবার কষ্ট আর সহ্য করা যায় না। একটু আগুন নেই ওদের। পুকুরের ওপারে সব আগুনকে পাহারা দিচ্ছে দুই ডাইনী থুথুরে বুড়ী। ওরা রেড ইণ্ডিয়ানদের একটুও আগুন দেবে না। আমরা যেমন করে পারি ওদের কাছ থেকে আগুন এনে দেব আমাদের বন্ধু দুরন্ত ইঁদুরের হাতে। কিন্তু সাবধান, ডাইনীরা খুব চালাক। আমি যেমন বলছি তোমরা সবাই তেমনিভাবে কাজ করবে। তোমাদের সবাইকে আমি জায়গা দেখিয়ে দিচ্ছি। আপন আপন জায়গায় তোমরা লুকিয়ে থাকবে। ব্যাং থাকবে পুকুর পাড়ে ঝোপের মধ্যে। কাঠবেড়ালী থাকবে ডাইনীদের তাঁবুর পথে আর একটু দূরে। বাদুড় গাছের আড়ালে থেকো। ভালুক, তোমার থাবা পেতে এই পাথরের ওপর বসে থেকো। তোমাকে না বলা পর্যন্ত এক পাও তুমি নড়বে না। হরিণ, তুমি শব্দ কোরো না । কিছু একটা না ঘটা পর্যন্ত তুমি খেয়াল রেখে অপেক্ষা কোরো। সব বন্দোবস্ত করে নেকড়ে বাঘটি এবার সুবোধ ছেলের মতো গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেল ডাইনীদের তাঁবুর কাছে। ওর তো কোন ভয় নেই । ডাইনীর ওকে তো আর শত্রু ভাবে না। ওরা শত্রু ভাবে শুধু রেড ইণ্ডিয়ানদের। তাই তাঁবুর কাছে ঘেঁষে নেকড়ে গলা পরিষ্কার করার ভান করে কেশে উঠল । অমনি বুড়ী দুটো চমকে উঠল- কে, কে আমাদের তাঁবুর বাইরে ? রেড ইণ্ডিয়ান কেউ ? নেকড়ে বলল- না, না বুড়ী মা, আমি নেকড়ে বাঘ। যা শীত পড়েছে! একেবারে যে জমে গেলাম। তোমাদের তাঁবুতে তো আগুন আছে। একটু যদি ভেতরে আসতে দিতে তাহলে পা চারটে একটু গরম করে নিতাম |  তা বাছা তুমি ভেতরে আসতে পারো। কিন্তু শরীরটা একটু গরম হলেই চলে যেতে
হবে।  তা আর বলতে, বুড়ি মা! মিনিট কয়েক না যেতেই নেকড়ে বাঘ একবার দু'বার করে তিনবার জোরে কেশে উঠল । সেই কাশির শব্দ শুনে ঝোপের আড়ালে লুকানো দুরন্ত ইঁদুর মুখের সামনে হাত তুলে জোরে লড়াই-এর আওয়াজ ছাড়তে লাগল । রেড ইণ্ডিয়ানদের শব্দ শুনে ডাইনী বুড়ী দুটো তাঁবু থেকে ছুটে বেরিয়ে এল। অমনি নেকড়ে বাঘ ডাইনীদের তঁবুর মধ্যে জ্বলছিল যে কাঠের টুকরাগুলো, তার একটা মুখে করে ঝড়ের বেগে বুড়ীদের পাশ দিয়ে ছুটে গেল । ডাইনী দুটো হায় হায় করে উঠল- ওরে আমাদের আগুন নিয়ে গেল রে! ধর্ ধর্ বলে বুড়ী দুটোও দৌড়াতে লাগল নেকড়ের পেছন পেছন। বুড়ী হলে কি হবে, ডাইনী তো! বাঘের চেয়ে ওরাও কম যায় না। আগুনের টুকরা মুখে করে দৌড়াতে দৌড়াতে নেকড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ল । বুড়ী দুটোও প্রায় ধরে ফেলছিল নেকড়েকে। কিন্তু নেকড়ে তখন হরিণ যেখানে লুকিয়েছিল সেখানে এসে পড়েছে। হরিণের মুখে আগুনের টুকরা দিয়ে নেকড়ে বলল, বাতাসের মতো ছুটে যাও। বুড়ী দুটো প্রায় এসে গেছে। অমনি হরিণ তার চার খুরের খটাখট্ আওয়াজ তুলতে তুলতে তীরের মতো ছুটতে লাগল । এবার বুড়ী দুটো কিছু পেছনে পড়ে গেল । হরিণ এসে পৌছল ভালুকের কাছে। ব্যবস্থামতো ভালুকও হরিণের কাছ থেকে আগুন নিয়ে ছুটতে লাগল । কিন্তু বেচারার ইচ্ছা থাকলে কি হবে— ওর সমস্ত শরীরটাই যে প্রকাণ্ড পাথরের মতো ভারী। চার পায়ের থপ্ থপ্ শব্দ তুলে ভালুকও চেষ্টা করল ছুটে চলতে। কিন্তু ডাইনীদের দুরন্ত বেগের সাথে ভালুক পারবে কেন ? বুড়ী দুটো এবার পেছন থেকে জাপ্‌টে ধরল ভালুককে। অমনি গাছের ডাল থেকে বাদুড় নেমে এসে ছোঁ মেরে ভালুকের মুখ থেকে আগুনের টুকরা নিয়ে ছুটতে লাগল । বাদুড়ের পরে ছিল কাঠবেড়ালী। বাদুড় এনে পৌঁছে দিল আগুন কাঠবেড়ালীর মুখে। ডাইনী দুটো এবার না পেরে ওদের সাপকে দিল কাঠবেড়ালীর দিকে লেলিয়ে। সাপের ছোবলে কাঠবেড়ালীর লেজ গেল বেঁকে। তবু সে আগুন ছাড়লো না । মুখে নিয়ে সে দৌড়ে এল পুকুর পাড়ে ব্যাং-এর কাছে। ব্যাং-এর মুখে দিতে না দিতেই ডাইনী দুটো প্রায় পৌঁছে গেল পুকুর পাড়ে। অমনি ব্যাং আগুনের টুকরো মুখের ভেতরে পুরে ডুব দিল পানির মধ্যে। ডাইনী দুটো আর কি করে। আগুনে-বুড়ী হলেও পানিতে ওদের বড় ভয় । দুরন্ত ইঁদুরও ততক্ষণে পুকুরের ও পাড়ে এসে ছুটতে ছুটতে হাজির হয়েছে। ব্যাং এবার ভেসে উঠল পানির তল থেকে । বন্ধু দুরন্ত ইঁদুরের হাতে সে তার মুখের ভেতর থেকে আগুনের টুকরাটি উগরে দিল। আগুনের টুকরাটি ছোট হলেও তখনও তাতে আগুন রয়েছে। তাই দুরন্ত ইঁদুর ছুটল সেই আগুনের টুকরা নিয়ে রেড ইণ্ডিয়ানদের কাছে। তাদের কাছে পৌঁছতেই তারা সবাই জয়ের আনন্দে চিৎকার করে উঠল। মিনিটের মধ্যেই তারা জোগাড় করে আনল শুকনো ডালপাতা আর কাঠের টুকরা। সে সবগুলোকে জড়ো করে বসিয়ে দিল তার উপর আগুনের টুকরাটি। একটু বাতাস বইতেই শুকনো পাতায় আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল । তখন রেড ইণ্ডিয়ানদের আনন্দের আর সীমা রইল না। ছোট্ট ছেলে দুরন্ত ইঁদুরের কত বুদ্ধি। সেই-ই তো তার পশু-বন্ধুদের নিয়ে এনে দিল এ আগুন । এ আগুন এবার তাদের জীবন বাঁচালো। এ আগুন তাদের শক্তি দিল। সবাই এবার একটি করে কাঠের খণ্ডে আগুন ধরিয়ে যার যার তাঁবুতে গিয়ে অগ্নিকুণ্ড জ্বালাতে লাগল  ডাইনী বুড়ী দুটোর তখন যে কী দুঃখ। কিন্তু কী আর ওরা করবে। এবার যখন রেড ইণ্ডিয়ানরা আগুন পেয়ে গেছে, তখন আর কি ওদের সঙ্গে পারা যাবে। হিংসুটে বুড়ী দুটো এবার নিজেদের হিংসার আগুনেই জ্বলে-পুড়ে মরে গেল ।

এই গল্পটি আপনার কাছে যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।


আশা করি এই পোস্ট টি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কিন্তু কমেন্ট করে জানাবেন। আর এরকম সব পোস্ট পেতে প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকুন আমাদের এই ওয়েব সাইট টি। আবার দেখা হবে পরবর্তী কোনো পোস্ট এ। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।



Md: Minhajul Islam YT


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url